নতুন ব্যবসায়ীদের প্রতিযোগীতায় টিকে থাকার ৫ টি উপায়



আমরা অনেকেই হয়ত মনে করি বর্তমানে প্রতিযোগীতার যুগে ব্যবসা করে টিকে থাকা অনেক বেশি কঠিন। 

কিন্তু এই ব্লগটি পড়ার পর আপনি এমন কিছু ধারনা পাবেন যা আপনাকে কেবল প্রতিযোগীতায় টিকে থাকতেই সহায়তা করবে না বরং আপনাকে প্রতিযোগীতায় এগিয়েও রাখবে।


  তার আগে একটি কথা মনে রাখবেন। যখনই কোন ব্যবসা করতে যাবেন, যেই ইন্ডাস্ট্রিতেই যান না কেন সবার আগে সেই ইন্ডাস্ট্রি সর্ম্পকে ভাল করে সব কিছু জেনে নিন। তা না হলে বেশি দিন আপনি ব্যবসায় টিকে থাকতে পারবেন না। 


ওয়ারেন বাফেট একটি কথা বলেছিন "আমার কাছে সেই ব্যবসায় বিনিয়োগ করা সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ যে ব্যবসা সর্ম্পকে আমার ধারনা নেই" তাই সব সময় ইন্ডাস্ট্রি সর্ম্পকে ভাল ভাবে ধরনা নিন তারপর নামুন।


এখানে আপনার সাথে কিছু টেকনিক শেয়ার করব যা আপনাকে প্রতিযোগীতায় এগিয়ে রাখবে অনেকগুন।

So let's start


১. ছোট গ্রুপ: 

বড় বড় প্রতিষ্ঠান গুলো ফোকাস করে বড় বাজারের উপড়। আপনি যেহেতু ছোট তাই আপনি প্রথমে ছোট গ্রুপকে সিলেক্ট করুন যেটা সচরাচর বড় কোম্পানি গুলো করে না। যাকে মার্কেটিং এর ভাষায় বলা হয় নিস। 


এমন জিনিষ সিলেক্ট করুন যেটাতে আপনি দক্ষ বা আপনার যেটা করতে আপনার ভাল লাগে। আর যখন ছোট কোন গ্রুপকে সিলেক্ট করবেন তখন তাদেরকে সেবা দেয়ার মান ও বাড়বে। যা আপনাকে প্রতিযোগীতায় এগিয়ে রাখবে।

আমাজন যখন তাদের ব্যবসা শুরু করেছিল তারাও প্রথমে শুধু বই বিক্রি করত।

আরেকটি উদাহরন Mc donalds, Domions,KFC যখন ফাস্ট ফুডের দুনিয়ায় রাজ করছিল, ঠিক তখনই ক্যালিফোর্নিয়ায় In n out Burger  নামে একটি নতুন ফাস্টফুড রেস্ট্রুরেন্ট এর জন্ম হয়। 


তার জানত যে শুরুতে তারা কখনই Mc donalds এর মত প্রতিষ্ঠানকে পেছনে ফেলতে পারবে না। তাই তারা ছোট গ্রুপ সিলেক্ট করে সেটা ছিল শুধু ক্যালিফোর্নিয়ার মানুষ।তাদের ক্রেতার সাইজ ছোট হওয়ায় Mc donalds, Domions,KFC এর চেয়ে ভাল সার্ভিস দিতে শুরু করল এবং কিছু দিনের মধ্যেই তারা ক্যালিফোর্নিয়ার মার্কেট লিডার হয়ে গেল।


আজ সেখানে মানুষ Mc donalds এর চেয়ে In an out burger কে সবচেয়ে বেশি ভালবাসে। 

তাই ছোট গ্রুপ সিলেক্ট করে কাজ করুন। ছোট গ্রুপ বিভিন্ন রকমের হতে পারে যেমন এলাকা ভিত্তিক,ক্রেতা ভিত্তিক,পন্যের বৈশিষ্ট্য ভিত্তিক ইত্যাদি। 

সীমাবদ্ধতা :

 প্রতিটি ইন্ডাস্ট্রির কিছু না কিছু সীমাবদ্ধতা বা সমস্যা আছে। সেটা খুজে বের করে সমাধান করুন।

এর জন্য আপনাকে অনেক টাকা বিনিয়োগ করতে হবে না। তবে সীমাবদ্ধতা খুজে বের করতে হলে অবশ্যই ইন্ডাস্ট্রি সর্ম্পকে ভাল ধারনা থাকতে হবে


ই কর্মাস ব্যবসা যখন ভারতে বিস্তার লাভ করতে শুরু করল, তখন পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ই কর্মাস প্রতিষ্ঠান আমাজন ভারতে তাদের ব্যবসার বিস্তার করতে লাগল। 

ঠিক সেই সময় ফ্লিপ কার্ট নামে নতুন আরেকটি ছোট প্রতিষ্টান ই কর্মাস ব্যবসায়ে আসল। ফ্লিপ কার্ট দেখল যে সবাই আমাজনের কাছ থেকেই পন্য নিচ্ছে। তাদের কাছ থেকে কেউ নেয় না। 


তারা চিন্তা করতে লাগল কীভাবে কি করা যায়। তৎকালীন সময় কোন কিছু অর্ডার করলে আগে পেমেন্ট করতে হত, তারপর প্রডাক্ট যেত। তাই অনেক গ্রাহকের ক্ষেত্রে এই বিষয় টা বিশ্বাসযোগ্য ছিল না। 

এই বিষয়টা  ফ্লিপ কার্ট বুঝতে পারে। তাই তারা চালু করল ক্যাশ অন ডেলিভারি পদ্ধতি। মানে আগে পন্য পরে টাকা। এতে করে তারা মানুষের বিশ্বাস অর্জন করতে সক্ষম হয়। এর ফলে দেখতে দেখতে ভারতে রাজত্ব করা পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ই কর্মাস সাইটকে পেছনে ফেলে তারা মার্কেট লিডার হয়ে যায়।


 ফ্লিপকার্ট ইন্ডাস্ট্রির সীমাবদ্ধতা বুঝে কাজ করেছিল বলেই আজ তারা মার্কেট লিডার।তাই আপনিও খুজে বের করুন আপনার ইন্ডাস্ট্রির সীমাবদ্ধতা কি এবং সমাধানের চেষ্টা করুন।



অতিরিক্ত কিছু দেয়া:


আপনার ক্রেতাকে আপনার সেবার বাইরেও অতিরিক্ত কিছু দেয়ার চেষ্টা করুন।
তাই এমন কিছু অতিরিক্ত সেবা প্রদান করুন যা আপনার ক্রতাকে আপনার পন্য কিনতে বা ব্যবহার করতে সহায়তা করে।


আমেরিকার সিনেমা হল গুলো যখন নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা করছিল ছবির মান,ভাল এয়ার কোন্ডিশন, পার্কিং ব্যবস্থা ইত্যাদি নিয়ে। ঠিক সেই সময় নতুন একটা সিনেমা হল এমন 
কিছু করল যা তাদেরকে সিনেমা হলের দুনিয়ায় সবচেয়ে জনপ্রিয় সিনেম হল বানিয়ে দিল। 


তারা তাদের সিনেমা হলের পাশে একটি বেবি কেয়ার সেন্টার স্থাপন করল। যারা যারা সিনেমা হলে মুভি দেখতে আসত তারা তাদের বাচ্চাদেরকে এখানে রেখে নিশ্চিন্তে মুভি উপভোগ করতে পারত।এর ফলে সকলে তাদের সিনেম হলে নিয়মিত আসতে থাকল। তারা ক্রেতার সমস্যা বুঝতে পারে এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়। 

যার ফলে আজ তারা প্রতিযোগীতায় সবার আগে।আপনিও কিন্তু কম টাকায়  অতিরিক্ত সেবা দিয়ে কম্পিটিটিভ এডভান্টেজ নিতে পারেন।


 সেটা হতে পারে বিভিন্ন এডভাইস,বিভিন্ন তথ্য যা ক্রেতাকে সাহায্য করবে।


৪.নতুন নতুন জিনিস এপ্লাই করা: 

এই পয়েন্টটির শুরু একজন বিখ্যাত ব্যাক্তির উক্তি দ্বারা করা যাক। 


একবার স্টিভ জবস বলেছিল "আমি প্রতিযোগীদের চেয়ে আরো ভাল পন্য তৈরিতে ফোকাস করি না। আমি তাদের চেয়ে ভিন্ন ধরনের কিছু তৈরিতে ফোকাস করি।"

মনে রাখবেন প্রতিযোগীতায় সেই টিকে থাকে যে নতুন কিছু করে, যা তার প্রতিযোগীরা কখনো চিন্তাও করে নি। নতুন কিছু সবসময় এপ্লাই করার চেষ্টা করুন। 


নিজের নতুন আইডিয়াটাকে প্রথমেই বড় পরিসরে করার দরকার নেই। ছোট পরিসরে আগে এপ্লাই করুন তারপর যদি সফল হয় তখন বড় পরিসরে নিয়ে আসবেন।


 মনে রাখবেন ১০ টা নতুন জিনিস চেষ্টা করার পর ১ টাও যদি সফল হয় তবে সেই একটা জিনিসই আপনাকে মার্কেট লিডার বানিয়ে দিবে। 


গুগল এর আগেও পৃথিবীতে আরও ৮ টি সার্চ ইঞ্জিন ছিল। কিন্তু গুগল তাদের সার্চ ইঞ্জিনে নতুন কিছু করেছিল। ফলে আগের ৮ টি সার্চ ইঞ্জিনকে পেছনে ফেলে দিয়েছে। আর এখন আমার গুগল ছাড়া অন্য কিছু চিন্তাও করতে পারি না। তাই নতুন কিছু করার চেষ্টা করুন।

৫.নিজের পন্যের উপড় বিশ্বাস: 


নিজের পন্য বা সেবার উপড় আপনার অটল বিশ্বাস আপনাকে অনেক বেশি এগিয়ে নিয়ে যাবে। আপনার যদি বিশ্বাস থাকে আপনার পন্য মানুষকে সাহায্য করবে তবে আপনি অবশ্যই সফল হবেন।

তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হল বর্তমান পৃথিবী সর্বোচ্চ ধনী ব্যক্তি জেফ বেজস। 
জেফ বেজস যখন প্রথম আমাজন চালু করল তখন তার দেখাদেখি অনেক বড় বড় প্রতিষ্ঠান তার মত সেবা দেয়া শুরু করল।

সকলে বলতে লাগল "এত বড় বড় প্রতিষ্ঠান গুলোর সাথে পুচকে আমাজন কীভাবে টিকবে! "।

 জেফ বেজস সবসময় একটি কথা বলত  "আমাদের চেয়ে বড় বড় প্রতিযোগীদের কাছে হয়ত সব কিছু আছে, কিন্ত  আমাদের কাছে আছে বিশ্বাস, আমাদের সেবার উপড়।


যা আমাদেরকে নিশ্চিত একদিন বড় বানাবে। তার নিজের পন্যের প্রতি অগাত বিশ্বাসই তাকে আজ পৃথিবীর সর্বোচ্চ ধনী এবং তার কোম্পানিকে ১ নাম্বার কোম্পানি বানিয়েছে।

এই ছিল ৫ টি টেকনিক যেগুলো জানলে একজন নতুন ব্যবসায়ীও কঠিন প্রতিযোগীতার মধ্যেও নিজেকে মেলে ধরতে পারবে।

Sources

বই 
Principles of Marketing
Blue Occean strategy
100$ start up
Sam walton Made in America. 




মন্তব্যসমূহ