বিজনেসের স্টুডেন্ট হিসেবে যে ২২ টি মার্কেটিং ল' আপনার জানা উচিত




মার্কেটিং আজ ব্যবসার প্রান হয়ে দাড়িয়েছে। একটি পরিসং্খ্যানে জানা গেছে যে, একটি বড় কোম্পানি তাদের আয়ের ১২% ব্যয় করে কেবল মার্কেটিং এর উপড়ে। ২০১৮ সালে দুনিয়া জুড়ে প্রায় ৬৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ হয়ে গেছে মার্কেটিং এর উপড়। কিন্তু কথা হল এতটাকা বিনিয়োগ হবার পর কি সবাই সফল হয়? মোটেও না।


 আপনি যদি মার্কেটিং এর ল' বা আইন মেনে মার্কেটিং না করেন, তবে সেই মার্কেটিং টাকার অপচয় ছাড়া আর কিছুই হবে না।


লেখক জ্যাক ট্রট এবং আল রাইস ২৫ বছর গবেষনা করে, মার্কেটিং এর ২২ টি ল বের করেছে যা প্রতিটি ব্যবসায়ী এবং ব্যবসা শাখার শিক্ষার্থীদের জানা উচিত। নিজের ব্যবসাকে অন্য লেভেলে নিয়ে যাওয়ার জন্য।

So Let's Begin


১.ল' অফ লিডার: 

এই ল' এর অর্থ হল অন্য প্রতিষ্ঠানের চেয়ে ভাল পন্য বানিয়ে তাদের সাথে প্রতিযোগীতা করার চেয়ে, নিজেই এমন কিছু তৈরি করুন যা আগে কেউ কখনো করে নি। মানে আপনি মার্কেটে নতুন কিছু এনে মার্কেট লিডার হয়ে যান। 


যেমন কোকা কোলা প্রথম সফট ড্রিংকস তৈরি করে,তাই তারা আজও সবার চেয়ে এগিয়ে।
এমাজন পৃথিবীর প্রথম ই কমার্স ওয়েবসাইট, যারা আজ প্রতি সেকেন্ডে ১১০ টি করে পন্য বিক্রি করে।


 যদি প্রথমে আপনার পন্যের কোয়ালিটি ভাল নাও হয়, তারপরও সবার প্রথম আপনার নতুন আইডিয়াকে ইম্পলিমেন্ট করে মার্কেট লিডার হবার চেষ্টা করুন। 

এইবার  ল' অফ লিডারের একটি এডভান্টেজ বলি,

আচ্ছা বলুন ত,  সবার প্রথম কে চাদে পা রাখে? 

এই কথা ত সবারই জানা নেইল আমস্ট্রং। 

কিন্তু তারপর চাদে কে পা রাখে? তার নাম কিন্তু কেউই জানি না। কারন প্রথম কোন ব্যাক্তি বা প্রথম কোন প্রতিষ্ঠান যদি নতুন কিছু করে বা নতুন কিছু মার্কেটে নিয়ে আসে তবে তার নামই মানুষের মনে থাকে। আর কেবল মনেই থাকবে কেন, এই নাম মানুষের জীবনের অংশও হয়ে যায়।

যেমন ফোটকপি মেশিন প্রথম জেরক্স নামক এক প্রতিষ্ঠান আবিষ্কার করে বিধায় আজও আমরা ফোটকপিকে জেরক্স কপি বলে ডাকি।


২. ল' অফ ক্যাটাগরি: সবাই যে কেবল ল' অফ লিডার টেকনিক ব্যবহার করেই সফল হবে এমন কোন কথা নেই। 

আপনি ল' অফ ক্যাটাগরি টেকনিক ব্যবহার করে সমান ভাবে সফল হতে পারবেন। ল' অফ ক্যাটাগরি বলে, আপনি যদি মার্কেট লিডার নাও হতে পারেন তবে যেকোন একটি ক্যাটাগরিতে লিডার হোন। 

যেমন 

বিশ্বের প্রথম এভারেস্ট জয়ীর চেয়ে, বাংলাদেশের প্রথম এভারেস্ট জয়ী মুসা ইব্রাহিমের নাম বাংলাদেশের মানুষের কাছে বেশি জনপ্রিয়। কারন মুসা ইব্রাহিম বাংলাদেশ ক্যাটাগরিতে লিডার। 

এই বিষয়টা মার্কেটিং এর ক্ষেত্রেও হয়ে থাকে। 
যেমন  ডেল প্রথম কম্পিউটার প্রস্তুতকারক না হয়েও তারা সফল, কারন তারাই প্রথম মোবাইল ফোনের মাধ্যমে কম্পিটার বিক্রি শুরু করেন। 


আবার অন্যদিকে ফেইসবুক সোশ্যাল মিডিয়ার দুনিয়ায় মার্কেট লিডার হলেও ইনস্টাগ্রাম শুধু মাত্র ছবি শেয়ারিং ক্যাটাগরিতে সফল।

এমনও আরো অনেক উদাহরন দেয়া যাবে।  

তাই আপনি খুজে বের করুন আপনি কোন ক্যাটাগরিতে মার্কেট লিডার হতে পারবেন



৩.ল অফ ডুয়ালিটি : আপনি যেই ইন্ডাস্ট্রিতেই যান না কেন,প্রত্যেক ইন্ডাস্ট্রিতেই দেখবেন প্রধান দুটি বড় বড় কোম্পানি তাদের মধ্যে প্রতিযোগীতা।
যেমন 


কোকা কোলা Vs পেপসি
Dettol vs savlon
Marbel vs Dc
Nike vs Reebook
Etc.

এসব প্রতিযোগীতা লং ট্রামে একটি কোম্পানিকে অনেক সুবিধা দেয়। যেমন ধরুন একজন যদি কোকা কোলার ফ্যান হয়, তবে আরেকজনকে আপনি নিশ্চয় পাবেন যে কি না পেপসির ফ্যান। তারা নিজেরাই  নিজ নিজ পছন্দের ব্র‍্যান্ড গুলো নিয়ে কথা বার্তা বলে। যা এসব প্রতিষ্ঠানের মার্কেটিং এর জন্যই ভাল। 



কারন মানুষ সাইড নিতে পছন্দ করে। আর একজন মানুষ তখনই একজনের সাইড নেয়, যখন তার নিজস্ব বিশ্বাস এবং কোম্পানির বিশ্বাস একসাথে মিলে যায়। বাস্তব জীবনে একটা জিনিষ দেখবেন আপনি তাকেই সহচর হিসেবে বাছাই করেন, যার বিশ্বাসের সাথে আপনার বিশ্বাস মিলে । 


ব্যবসার ক্ষেত্রেও ল' অফ ডুয়ালিটিতে আসতে চাইলে এমন এক বিশ্বাস নিজের পন্যের সাথে যুক্ত করুন, যা আপনার কাস্টমারের বিশ্বাসের সাথে মিলে যায়। এর ফলে কাস্টমার আপনাকে ছেড়ে সহজে যাবে না।


৪.ল অফ প্রিডেক্টিবিলিটি

এই ল বলে কম্পানিকে সবসময় ফ্লেক্সিবল থাকতে হবে।  কারন আপনার কোম্পানি যদি সময়ের সাথে সাথে পরির্বতন না হয় তবে এই সময়ই আপনার কোম্পানিকে গ্রাস করে ফেলবে। বর্তমান সময়ের ট্রেন্ড অনুসরণ করে কোম্পানির কৌশল অবলম্বন করা উচিত। 


কোডাক এক সময়কার বিখ্যাত  ব্রান্ড ছিল। তারা ক্যামেরা, ক্যামেরার রিল, এবং প্রিন্টার প্রডিউস করত । যাদের সফল কেস স্টাডি আজও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো হয়। কিন্তু সময়ের ট্রন্ডের সাথে নিজেদেরকে মানিয়ে না নেয়ায় আজ তারা পুরো বিলীন। তাদের কোম্পানির নামও নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। 

যেভাবে নিশ্চিহ্ন হয় কোডাক! 

সময়টা তখন ডিজিটাল ক্যামেরার যুগ। সব ক্যামেরায় রিলের পরিবর্তে মেমরি কার্ডের ব্যবহার শুরু হল। কিন্তু কোডাক নতুন ডিজিটাল ক্যামেরার আইডিয়াটা তাদের কোম্পানিতে এপ্লাই করল না। তারা তাদের নিজের পুরোন ক্যামেরা এবং তাতে ব্যবহৃত রিল নিয়ে এতটাই আত্মবিশ্বাসী ছিল যে তারা বলত মানুষ কখনই এই ডিজিটাল ক্যামেরাকে এডাপড করবে না। 


এই ধারনাকে আগলে রেখে তার তাদের কৌশলে কোন পরির্বতন আনে নি। ঠিক ওই সময়টাতে  ডিজিটাল ক্যামেরা এতটাই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে, যে রিল ক্যামেরার প্রতি সকলে তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। ফলশ্রুতিতে কোডাক তাদের কাস্টমার হারাতে থাকে এবং একসময় তারাও বিলিন হয়ে যায়।


তাই সময়ের সাথে সাথে স্ট্রাটেজিকে পরির্বতন করুন।


৫.ল' অফ লেডার :

 ল' অফ লেডার হল মার্কেটে নিজের অবস্থান বুঝে মার্কেটিং করা। মনে করুন মার্কেট শেয়ার অনুযায়ী মার্কেটে আপনার অবস্থান ১০ নাম্বারে। এখন আপনি যদি বলেন যে আমরা সবার চেয়ে ভাল সার্ভিস দেই। তবে যারা আপনার সম্ভাব্য কাস্টমার আছে তারা বলতেই পারে, "এত ভাল সার্ভিসই যদি দাও তবে ১০ নাম্বার পজিশনে কেন।" 

এই ধরনেরই একটি ভুল হয়েছিল এভিস নামক একটি কার রেন্টাল কোম্পানির ।  আমেরিকার কার রেন্টাল মার্কেটের প্রথম অবস্থানে ছিল হার্টয কার রেন্টাল কোম্পানি আর ২ য় অবস্থানে ছিল এভিস কার রেন্টাল কোম্পানি।
একবার এভিস কার রেন্টাল কোম্পানি একটি এড ক্যম্পেইন ছাড়ে যেটি ছিল "Finest in a rent a car" অর্থাৎ ভাড়া গাড়ির সেবায় আমরাই সবচেয়ে ভাল। যেটি পুরোপুরি ফ্লপ হয়।

 কারন নাম্বার ২ পজিশনে থেকে কেউ সবচেয়ে ভাল সার্ভিস দিতে পারে না। এটা বুঝতে পেরে তারা আরেকটি মার্কেটিং স্ট্রাটেজি হাতে নেয় সেটি ছিল এইরকম "আমদের পজিশন ২ নাম্বারে বলে আমরা অনেক বেশি পরিশ্রম করি তাই আমাদের সাথেই থাকুন" এই এড ক্যাম্পেইনটি অনেক হিট হয় এবং তারা অনেক টাকা মুনাফাও করে।


 তাই মার্কেটে নিজের অবস্থান বুঝে মার্কেটিং স্ট্রাটেজি সাজান। মার্কেটে প্রথম এসেই যদি নিজেকে বেস্ট বলা শুরু করেন তবে সেটা কখনই মানুষের কাছে বিশ্বাস যগ্য হবে না।


৬.ল অফ অপসিট : 

ল' অফ অপসিট বলে, মার্কেট লিডারের চেয়ে বেস্ট হবার চেষ্টা করার চাইতে মার্কেট লিডারের চেয়ে ভিন্ন কিছু করা চেষ্টা করা। এই নিয়মটি এপল ও ফল করে। একবার স্টিভ জবস এক ইন্টারভিউতে বলে ছিল, "আমি কখনো আমার প্রতিযোগীর চেয়ে বেস্ট কিছু করার চেষ্টা করি নি, আমি তাদের চেয়ে ভিন্ন কিছু করার চেষ্টা করি। "

কোকা কোলা পৃথিবীর প্রথম সফট ড্রিংক প্রস্তুতকারক কোম্পানি  এবং সবচেয়ে প্রাচীন কোম্পানি হওয়া সত্তেও এই কোকা কোলার সাথেই চোখে চোখ মিলিয়ে প্রতিযোগীতা করে যাচ্ছে পেপসি। 

তারা কীভাবে সফল হল। 


কোকা কোলা সবচেয়ে প্রাচীন ব্র‍্যান্ড এটা বুঝতে পেরে পেপসি মার্কেটিং করল choice for the new generation. অর্থাৎ নতুন প্রজন্মের পছন্দ। তারা কিন্তু কোকা কোলার চেয়ে বেস্ট কিছু করতে যায় নি। তারা কেবল কোকা কোলার বিপরীতে তাদেরকে পজিশন করেছে। 

তাই 
Don't try to be master over the boss.Try to be Different from the boss.


এই ছিল ২২ টি ল' এর মধ্যে ৬ টি ল'। যেগুলো জানলে আপনি সঠিক ভাবে আপনার মার্কেটিং স্ট্রাটেজি ঠিক করতে পারবেন।

এই বইয়ের বাকি ল' গুলো জানতে চাইলে আমাদের কমেন্ট করুন। 







মন্তব্যসমূহ