একটি সহজ প্রসেস যা আপনার সার্ভিসকে আপনার ক্রেতার আসক্তি বানাবে



ভাই! আমি ফেইসবুক এবং ইন্টারনেটে অনেক বেশি এডিক্টেড। অনেকরেই এইধরনের সমস্যা আছে।  ইন ফেক্ট ২০১৮ সাল পর্যন্ত আমরাও এই অভ্যাসটা ছিল।

আচ্ছা!  কখনো কি ভেবে দেখেছেন যে, এই ইনস্টাগ্রাম পাবজি, ফেইসবুকের প্রতি আমরা কেন এত বেশি আসক্ত?

এখানে আমরা  ফেইসবুকের কোন সমোলচনা করব না। আমরা যেহেতু বিজনেস মাইন্ডের লোক তাই, আমরা জানব কোন মডেলটি ব্যবহার করে ফেইসবুক মানুষের আসক্তিতে পরিনত হয়েছে। আর আমরা কীভাবে এই মডেলটা আমাদের ব্যবসায় ব্যবহার করতে পারি, সেটাই জানব এই ব্লগে। 

So let's Begin

আসলে, কেবল ফেইসবুক বললে ভুল হবে। বর্তমানে ক্লাশ অফ ক্লান, পাবজি,টিকটক, ইউটিউব, আমাজন, ইনস্টাগ্রাম, পিন্টারেস্ট ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানও ঠিক একই মডেল ব্যবহার করে। আর সেই মডেলের নাম হল হুকড মডেল। এটি এমন একটি মডেল যেটি ব্যবহার করলে আপনার পন্য বা সার্ভিস ছেড়ে মানুষ কখনো যাবেনা 

মডেলটি কিভাবে ডিজাইন করা??


এই হুকড মডেলটি ৪ টি ভাগে বিভক্ত। সেই ৪টি ভাগ বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।


১. ট্রিগার : 

ট্রিগার বলতে বুঝায় কোন জিনিষের প্রতি উদ্দিপনা যোগানো। ট্রিগারকে ২ ভাগে ভাগ করা যায়

i. ইন্টারনাল ট্রিগার : এই ট্রিগার হল, বসে বসে বোর ফিল অনুভব করছি, যাই একটু ফেইসবুকে ঢু মেরে আসি।

ii. এক্সটারনাল ট্রিগার : অন্য আরেকজন ফেইসবুক চালাচ্ছে,  সেটা দেখে  নিজেরেও ফেইসবুক চালাতে ইচ্ছা করা। 

মূলত হল ফেইসবুক চালানোর কথা মনে করিয়ে দেয়া। যেমন ফেইসবুক কি করে যখনই কারোর ইন্টারনেট কানেকশন অন থাকবে,তখন নোটিফিকেশন, মেসেজ এসব দিয়ে আমাদের মনোযোগ ফেইসবুকের দিকে নিয়ে আসে। ফলে আমরা চিন্তা করি, 'যাই একটু দেখে আসি'। তারপর আর কি ঘন্টার পর ঘন্টা কাটিয়ে দেই। এটাই ট্রিগারের কাজ আপনাকে মনে করিয়ে দিবে এটা ব্যবহার কর। 
এত গেল সোশাল মিডিয়ার কথা।


 এখন বিজনেসে এসে এটা কীভাবে কাজ করে।
দেখুন আমরা যখন কোন ওয়েব সাইটে যাই, সেখানে দেখবেন একটা কুকি পলিসির অপশন দেয়। যেটাতে যদি আপনি এগ্রি তে ক্লিক করেন তবে আপনাকে বিভিন্ন সময়  নটিফিকেশন সেন্ড করতে থাকবে। যা আপনাকে বার বার সেই প্রডাক্ট বা সার্ভিসের কথা মনে করিয়ে দিবে। অনেক ক্ষেত্রে ইমেইল নিয়ে আপনাকে বার বার ইমেইল সেন্ড করে। এইভাবে আপনিও আপনার ওয়েবসাইটে এইরকম অপশন এড করুন যাতে কাস্টমারকে বিভিন্ন সময় পর পর কিছু নটিফিকেশন সেন্ড করতে পারেন। 


তবে আপনি যদি ফেইসবুকে বিজনেস করেন তবে একটা গ্রুপ খুলতে পারেন। কারন যখনই আপনি গ্রুপে কোন প্রডাক্টের পোস্ট দিবেন সেটার নটিফিকেশন আপনার গ্রুপ মেম্বারদের কাছে চলে যাবে। যা ট্রিগার হিসেবে কাজ করবে।

২. একশন : একটা কাজ যত সহজ হবে, মানুষ সে কাজটা তত বেশি করবে। ফেইসবুক ব্যবহার করা অনেক বেশি সহজ। শুধু মোবাইলে দুই একটা ট্যাপ করলেই ফেইসবুক ব্যবহার করা যায়। হুকুড মডেলের নীতি হল আপনার অডিয়েন্সের কাজকে এত সহজ করে দিবেন যাতে, তারা আপনার পন্য বা সার্ভিস ব্যবহারে কোন প্রকার বিরক্তি বোধ না করে।

এই কাজটি পিনটারেস্ট খুব ভাল করে যা এখন ফেইসবুকও করছে। সেটা হল, অনেক আগে আমরা যখন ফেইসবুক নিউজ ফিড স্ক্রোল করতাম, তখন ১০টা বা ৫ টা স্টাটাস দেখার পর। নিচে একটা লেখা আসত 'see More' এবং সেখানে ক্লিক করে আরো পোস্ট দেখতে পারতাম। বর্তমানে অডিয়েন্সের সেই ক্লিক করার কষ্টও দূর করে দিয়েছে ফেইসবুক। এখন ত খালি স্ক্রোল করলেই অটোমেটিক সব পোস্ট এসে যায়। যা অডিয়েন্সের কাছে Easy to Use.
এর ফলে ফেইসবুক ব্যবহারে কারোর এত টুকুও বিরক্ত লাগে না। এবং এর প্রতি আরো বেশি আসক্ত হয়ে যায় মানুষ। 


আপনি বিজনেসে কি করবেন, আপনি আপনার কাস্টমারের মেসেজের দ্রুত রিপ্লে দেয়ার চেষ্টা করবেন। কারন অপেক্ষা কেউ পছন্দ করে না। আর এর জন্য আপনি সবসময় ফেইসবুকে বসে থাকতে পারবে না । তাই চ্যাট বট ব্যবহার করুন এটি অটোমেটিক মেসেজিং সিস্টেম। যা দ্রুত আপনার কাস্টমারকে রিপ্লে দিবে আপনি না থাকলেও। চ্যাট বট সম্পূর্ন ফ্রি আপনি চাইলেই নিজে ইনস্টল করতে পারেন অথবা আমাদের দিয়ে করাতে পারেন (বিস্তারিত নিচে)। 


৩. ভ্যারিয়েবল রিওয়ার্ড :

আচ্ছা মনে করুন, আপনাকে একটা কাজ দেয়া হল। কাজটা যদি শেষ করতে পারেন তবে আপনাকে ১ বক্স চকলেট দেয়া হবে। প্রতিবার কাজটি করার পর আপনি চকলেটই পাবেন।  এইরকম করে একই কাজ ১ বার ২ বার ৩ বার হয়ত করবেন।কিন্তু একটা সময় পর আপনি বোর হয়ে যাবেন। কারন আপনি জানেন যে এই কাজটি করলে আপনি কেবল চকলেটই পাবেন। 


এইবার ধরুন আপনাকে আরেকটি কাজ দেয়া হল যেখানে প্রতিবার ভিন্ন গিফট দেয়া হয়।
যেমন প্রথমে চকলেট, পরের বার একটি বই, তার পরের বার একটি কলম দিল ইত্যাদি।


 এখন বলুন ত আপনার এই কাজটি করতে কি বোর লাগবে?  বরং পরের বার কি গিফট পাবেন সেটা দেখার জন্য হলেও আপনি আগ্রহের সহিত কাজটি করবেন।


তাই ভ্যারিয়েবল রিওয়ার্ড একটি পন্যের প্রতি আসক্তির সৃষ্ট করে। যেমন ফেইসবুকের নিউজফিড কত ভিন্ন রকমের কনটেন্ট থাকে। যদি একই কনটেন্ট বার বার দেখানো হত তবে কেউই আসত না। আর এখন সবাই ঘুম থেকে উঠে আগ্রহের সাথে ফেইসবুক খুলে এটাই দেখে যে, আজকে নতুন কি আছে।

এইবার বিজনেসে কীভাবে ব্যবহার করবেন?


তার জলন্ত উদাহরন হল আলি এক্সপ্রেস। আলি এক্সপ্রেসের নাম আমরা যারা না জানি তাদের বলে রাখি, আলি এক্সপ্রেস হল চায়না ভিত্তিক একটি ই কমার্স সাইট। তারা  তাদের কাস্টমারকে প্রতিদিন কিছু না কিছু ডিসকাউন্ট,কিছু কুপন, কিছু পয়েন্ট দিতেই থাকে। এত ভ্যারিয়েবল গিফটের কারনে, ক্রেতাদেরও আগ্রহের কেন্দ্র বিন্দু থাকে এই আলি এক্সপ্রেস।


তাই আপনিও বিভিন্ন ডিসকাউন্ট, কুপন,পয়েন্ট দিয়ে ভ্যারিয়েবল রিওয়ার্ডের সৃষ্টি করতে পারেন।

৪.ইনভেস্টমেন্ট :

যে জিনিষে আমরা আমাদের সময়, শ্রম ব্যয় করি সে জিনিষটাকে আমরা একরকমের ইনভেস্টমেন্টের মতই দেখি। আর সেই জিনিষটাকে সহজে ছাড়তেও চাই না।

এখন ফেইসবুকের ব্যপারটিও কিছুটা এইরকমই। আমাদের একটি ফেইসবুক একাউন্টে অনেক অনেক ফ্রেন্ড থাকে, অনেক ছবি, মেমরি থাকে যা আমাদের কাছে একরকমের ইনভেস্টমেন্টেরই মত।  যেটাকে চাইলেও ছাড়তে  পারি না।


এখন বিজনেসে কি হয়।

আবারো আলি এক্সেপ্রেসের উদাহরন দেই। আলি এক্সপ্রেস থেকে যখনই কেউ কোন পন্য কিনে বা একাউন্টও খুলে, তবে তাকে কিছু পয়েন্ট বা কুপন দেয়া হয়। যা পরর্বতীতে ব্যবহার করে ডিসকাউন্টে পন্য কিনতে পারে। এখন এসব পয়েন্ট যখন একাউন্টে জমা থাকে তখন সে পরর্বতীতে ব্যবহারের জন্য হলেও একাউন্ট টাকে ছাড়তে চায় না।



তার মধ্যে তারা আবার গোল্ড মেম্বার,সিলভার মেম্বার,প্লাটিনাম মেম্বার ইত্যাদি কিছু লেভেল তৈরি করে। এর ফলে যা হয়, একজন যদি নরমাল মেম্বার থাকে সে চায় গোল্ড মেম্বার হতে, গোল্ড থাকলে প্লাটিনাম হতে চায়। তাই সে আরো সময় একটি একাউন্টে ব্যয় করতে চায়। ফলে কাস্টমার তাদের ছেড়ে যেতে চায় না। 


এই ছিল ৪ টি স্টেপস যেগুলো ব্যবহার করে আজ ফেইসবুক, ইনস্টাগ্রামের, পাবজির মতো প্রতিষ্ঠান গুলো মানুষের আসক্তিতে পরিনত হয়েছে। আপনিও যদি চান যে আপনার ক্রেতারা বার বার আপনার কাছে আসুক তবে আপনিও ৪ টি নিয়ম অনুসরন করতে পারেন।


আপনারা যারা চ্যাট বট নিজের ফেইসবুক পেইজে ইনস্টল করতে চান তারা যোগাযোগ করতে পারে এই লিংকে গিয়ে





মন্তব্যসমূহ