কীভাবে ধনী হবেন



একসময় ব্যবিলিয়ন ছিল বিশ্বের অন্যতম ধনী দেশগুলোর মধ্যে একটি । ব্যবিলিয়নের রাজা বানিজ্য করে,যুদ্ধ করে অনেক সম্পত্তি তার দেশের অর্জন করেছিল।

কিন্তু দূর্ভাগ্যবশত এত সম্পত্তি দেশটিতে বর্তমান থাকা সত্তেও দেশটির বেশির ভাগ মানুষই ছিল গরিব। 

এটা দেখে রাজা একবার তার মন্ত্রীকে ডেকে বলল "আমার দেশে সম্পত্তির ত কোন অভাব নেই। তারপরও বেশির ভাগ মানুষ কেন গরিব। "

মন্ত্রী উত্তর দিল, "মহারাজ,ব্যবিলিয়নের বেশির সম্পত্তি মালিক হাতে গোনা কিছু লোক"


তখন রাজা বলল,"এটা কী করে সম্ভব, ছিনিয়ে নাও সব সম্পত্তি তাদের কাছ থেকে!"


মন্ত্রী বলল "ক্ষমা করবেন মহারাজ,আমরা চাইলেও এটা করতে পারব না। তারা তাদের সকল সম্পত্তিই বৈধ্য ভাবে অর্জন করেছে।আর তারা জানে যে কীভাবে ধনী হতে হয়।"


এটা শুনে রাজা বলল, "আচ্ছা,তাহলে ব্যবলিয়নের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিটিকে আমার সামনে পেশ করার ব্যবস্থা কর।"

সেই সময়কার ব্যবিলিয়নের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি ছিল আর্কাদ নামের একজন।


রাজার কথা মত তাকে পেশ করা হয়।
রাজা তাকে জিজ্ঞাসা করে, "আর্কাদ ধনী হওয়াটা কি অনেক কঠিন বিষয়? "

আর্কাদ তখন হেসে উত্তর দিল, "মোটেও না! মহারাজ। বরং যে কেউ চাইলেই ধনী হতে পারে। যদি সে কিছু নিয়ম মেনে চলে। "

রাজা তাকে অনুরোধ করল "তুমি কি সেই নিয়ম গুলো আমার দেশের জনগন কে শেখাবে? "
আর্কাদ উত্তর দিল, "অবশ্যই! এটা ত আমার জন্য সৌভাগ্য"


কথামত পরদিন সকালে ব্যবিলিয়নের ৫০ জন যুবককে আর্কাদের কাছে পাঠানো হয়। আর্কাদ তাদেরকে বলল, "আমি আমার জীবনের আলোকে ৬ টি নিয়ম বলব। যা অনুসর করে আমি ধনী হয়েছি। এবং তোমরাও পারবে"

নিয়ম ১ : 

আমি প্রথমে পাথরে খোদাইয়ের কাজ করতাম। আমার আগে থেকেই ধনী হবার ইচ্ছা ছিল। একদিন এলকামিস্ট নামক এক ধনী ব্যক্তি আমার কাছে আসে মাটির পাত্রে কিছু লেখানোর জন্য। 

আমি তাকে তার কাজটি করে দেই। এবং 

আমি তাকে অনুরোধ করি, "আমি আপনার মত ধনী হতে চাই। আপনি কি আমাকে বলতে পারবেন? আমি কীভাবে ধনী হতে পারব!"


এলকামিস্ট : অবশ্যই! তাহলে শুন,আমার ধনী হবার যাত্রা তখন থেকেই শুরু যেদিন থেকে আমি এই নিয়মটি অনুসরন করা শুরু করলাম।নিয়মটি ছিল এইরকম যে, আমি আমার আয়ের ১০% সবার আগে আমি নিজেকে দিতাম। মানে আমি আমার আয়ের ১০% সঞ্চয় করতাম নিজের জন্য। তারপর সবকিছু করতাম। নিজের খরচের জন্য হলেও ১০% এ আমি কখনো হাত দিতাম না।


তুমি ত সবাইকে সবার কাজের জন্য টাকা দাও। আজ পর্যন্ত নিজের কাজের জন্য কি নিজেকে কখনো টাকা দিয়েছো। এই ১০% হল তোমার কাজের পুরষ্কার। 

যেই ১০% তোমাকে ভবিষ্যৎ এ আরো টাকা বানিয়ে দিবে।যে ভাবে আমাকে একজন সাধারন মেষ বালক থেকে ধনী ব্যক্তি বানিয়েছে।

তাই সবার প্রথম নিজের আয়ের ১০% সঞ্চয় কর।

নিয়ম ২ 


যত টাকা ইনকাম করছেন তার চেয়ে খরচ কম করা। আমাদের বেশির ভাগ মানুষের মধ্যেই একটি অভ্যাস প্রায়ই দেখা যায় সেটি হল, ইনকামের চেয়ে আমরা খরচ বেশি করে।যেটা আমাদের সঞ্চয়কে একসময় শেষ করে দেয়।


আমি যখন আগের চেয়ে ভাল কিছু টাকা ইনকাম করতে শুরু করলাম। তখন নিজের জন্য ভাল কাপড়, নিজের জন্য ভাল খাবার ইত্যাদি কিনতে শুরু করলাম। 


সেটা দেখে আমার গুরু মানে এলকামিস্ট বলল " তুমি ত টাকার গাছ লাগানোর পরপরই সেটাকে কেটে ফেলছ, এত টাকা খরচ করবার মত সঠিক সময় এখনো আসে নি।" 


তাই নিজের ইনকামের চেয়ে বেশি টাকা খরচ করবেন না।

নিয়ম ৩ : 


আপনি যখন নিজের জন্য টাকা সঞ্চয় করা শুরু করলেন। তখনই মনে করবেন আপনি টাকা তৈরির জন্য কর্মী তৈরি করে ফেলেছেন। 


যারা আপনাকে আরো টাকা বানিয়ে দিবে। এখন কর্মীকে যদি ঘরে বসিয়ে রাখেন। তবে তারা কখনই আপনার জন্য টাকা বানাতে পারবে না।


তাই তাদেরকে কাজে লাগাতে হবে। মানে হলে আপনার সঞ্চয়ের টাকাকে বিনিয়োগ করতে হবে। তাই নিয়ম নাম্বার ৩ হল সঞ্চয়ের টাকা গুলোকে সঠিক বিনিয়োগ করুন।


নিয়ম ৪ : 

আমি যখন টাকা জমানো এবং ইনভেস্ট করা শুরু করলাম।একদিন এলকামিস্ট আমার কাছে এসে জিজ্ঞাসা করল

এলকামিস্ট : তুমি তোমার জমানো টাকা কোথায় বিনিয়োগ করেছো?

আমি: আমার এক বন্ধুর ব্যবসায় সেই টাকা দিয়েছে যে কি না বিদেশ থেকে সস্তায় সোনা কিনে এখানে বিক্রি করবে। 

এলকামিস্ট: পেশায় কি করে? 


আমি : সে একজন রাজমিস্ত্রি "

এলকামিস্ট :তুমি সবচেয়ে বড় ভুল কাজটি করেছো।যে কখনো সোনা নিয়ে কাজ করে নি। তুমি তার সোনার ব্যবসায় বিনিয়োগ করেছো!

কিছু দিন পর তাই ঘটল আমার বন্ধু নকল সোনা কিনে নিয়ে আসে। ফলে আমার সব টাকার ক্ষতি হয়ে যায়।


এলকামিস্ট আমাকে বলেছে , "এমন ব্যবসায় বিনিয়োগ করবে যে ব্যবসা সম্পর্কে তোমার স্পষ্ট ধারনা। আর এমন লোকের পিছনে টাকা বিনিয়োগ করবে না যে তার কাজে অভিজ্ঞ নয়"

তাই সবসময় সঠিক ব্যবসায় বিনিয়োগ করুন যেটাতে আপনার ভাল ধারনা আছে। আর সঠিক লোকের পিছনে বিনিয়োগ করুন যার ভাল অভিজ্ঞতা আছে।


নিয়ম ৫ : 


একবার একটি ছেলে  আমার কাছে টাকা ধার চাইতে আসল।

আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম "ধার নিয়ে তুমি কি করবে?"

সে আমাকে বলল, "আমার মাসিক খরচ মেটানোর জন্য।"


আমি তাকে বললাম, "তোমারর এখন টাকার দরকার নেই। তোমার দরকার হল নিজের আয় বাড়ানোর।"

আমি সবসময় একটি কথা  প্রতিনিয়ত বলি সবসময় নিজের আয় বাড়ানোর চেষ্টা করুন। যখন আপনাদের আয় বাড়বে। তখন আপনাদের সঞ্চয়ও বাড়বে ফলে আপনাদের বিনিয়োগও বাড়বে। যা আপনাদেরকে ধনী হতে সাহায্য করবে।

তাই নিজের আয় বাড়ান।

নিয়ম ৬ :

নিজের একটা বাড়ি অবশ্যই থাকা চাই। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নিজের একটা বাড়ি কেনার চেষ্টা করুন। এটা আপনাকে বাসস্থানের নিরাপত্তা দিবে। 

এবং বাড়ি ভাড়ার যে খরচ সেটা থেকেও আপনাকে মুক্তি দিবে।তাই নিজের বাড়ি কিনুন।



এই ৬ টি নিয়ম যদি আপনারা সবাই মেনে চলতে পাড়েন তবে আপনারাও আমার মত ধনী হতে পারবেন।


এই ছিল Richest man in Babylon বইয়ের কিছু অংশ। যা হয়ত আপনাকে ধনী হতে সাহায্য করবে।

বোনাস পয়েন্ট : 
লেখক একটি কথা এই বইটি বলেছেন যে, এমন মানুষকে কখনো ধার দিবেন না, যার সেই ধার শোধ করার ক্ষমতা নেই।




মন্তব্যসমূহ