নতুন অনলাইন বিজনেসের জন্য ফ্রি মার্কেটিং ট্রিকস




মনে করুন আপনি অনলাইনে একটি শপ শুরু করলেন।  প্রডাক্ট কেনা আর বাকি সব আনুসাংগিক কিছু খরচ করার পর, মার্কেটিং এর জন্য  টাকা রইল না। এখন কি করবেন?

মার্কেটিং না করার কারনে এখন কাস্টমার ত আসে না!

এই ধরনের সমস্যা অনেক নতুন ব্যবসায়ীদের হয়ে থাকে। তাই এই সমস্যার সমাধান দিবে এই ব্লগ। 
Let's  Start

একটা কথা মনে রাখবেন মার্কেটিং করতে হলে যে আপনাকে অনেক টাকা খরচ করতে হবে সেটা কিন্তু মোটেও ঠিক না। কম খরচে, এমনকি বিনা টাকা খরচ করেও আপনি ভাল মার্কেটিং করে আপনার পন্যের সেল বাড়াতে পারেন। এমন কিছু সাইকোলজিকাল মার্কেটিং টেকনিক রয়েছে যেগুলো আপনার বিক্রির গ্রোথকে দিগুন করে দিবে কোন টাকা ছাড়াই। 

তাই আজকে  আপনাদের কিছু সহজ কিন্তু অনেক গুরুত্বপূর্ণ টেকনিক বলব যেগুলা শুধু ছোট প্রতিষ্ঠানই নয় বরং রোলেক্স এর মত বড় প্রতিষ্ঠানও ব্যবহার করে থাকে।

তবে চলুন শুরু করা যাক।




১.ল অফ স্কারসিটি


কোন জিনিস যদি মানুষকে অফুরন্ত দেয়া হয় তবে সেটার প্রতি মানুষের আগ্রহ কম থাকে। কিন্তু সেই জিনিসটাকেই যদি সীমিত করে দেয়া হয় তবে তার আগ্রহের মাত্রা অনেক গুনে বেড়ে যায়। 


মনে করুন আপনাকে একটা এসাইনমেন্ট দেয়া হল এবং বলল যেকোন সময় আপনি জমা দিতে পারেন। এখন আপনি আস্তে আস্তে এসাইনমেন্টের কাজ করবেন যে এসাইনমেন্ট ২ দিনে শেষ করা যায় সেটা আপনি ১ মাস ধরে করবেন।

এই বার আপনাকে যদি বলা হয়, যে ১ দিনের মধ্যে আপনাকে আপনার এসাইনমেন্ট শেষ করতে হবে। তখন আপনি সব কিছু ছেড়ে ছুড়ে খালি এসাইনমেন্টই করতেন। এবং সেটা শেষ করে ফেলবেন। এটাই হল ল অফ স্কারসিটি।

মানে কাস্টমারকে সবসময় একটি হারিয়ে /শেষ হয়ে যাবার ভয়ের মধ্যে রাখা। যেমন 

মনে করুন আপনি চশমা সেল করেন অনলাইনে। এইবার চশমার ছবির নিচে যদি লিখে দেন যে আর মাত্র ১০ টি চশমা বাকি আছে, এখুনি কিনে নিন তা না হলে এই দামে আর নাও পেতে পারেন। এই যে আর মাত্র ১০ টি, আর মাত্র ৭ দিন বাকি এই অফারের; এসব জিনিষগুলো কাস্টমারের মনে একধরনের হারিয়ে যাবার ভয়ের সৃষ্টি করে, ফলে কাস্টমার দ্রুত পন্য কিনে ফেলে।

 অনেক বড় বড় কোম্পানির পন্য বিক্রয়ের সময় লিখে যে স্টক সীমিত, অথবা এই অফারটি সীমিত সময়ের জন্য এগুলা সব Law of scarcity এর উদাহরন। 





২. রেসিপ্রোসিটি : 


আমার বাড়ির পাশে একটা ছেলে ছিল। এমনিতে তাকে চিনতাম কিন্তু কখন সরাসরি কথা হয় নি। একদিন সেই ছেলেটি আমাকে তার জন্মদিনে ইনভাইট করল। আমি তার জন্মদিনের অনুষ্ঠানে যাই।


 কিছুদিন পর আমার জন্মদিনের জন্য পরিকল্পনা করছিলাম যে কাকে কাকে ডাকব। তখন আমি সেই ছেলেটাকেও আমার জন্মদিনের আমন্ত্রণ জানালাম। এবং সে আসল আমার জন্মদিনে। আমরা সেদিন অনেক কথা বলি এবং আজ সে আমার অনেক ভাল বন্ধু। যে ছেলেটির সাথে আমি কখনো কথাই বলি নাই সেই ছেলেটি আমার বন্ধু হয়ে গেল কি করে এটাই আসলে রেসিপ্রোসিটি। 


কেউ যদি আমাদের সাথে ভাল কিছু করে,
আমারও চাই তার জন্য ভাল কিছু করতে। এবং সমান সমান থাকতে। এটা আসলে মানুষের বৈশিষ্ট্য। অই দিন সেই অচেন ছেলেটা আমাকে তার জন্মদিনে ডেকেছিল বলে আমিও তাকে আমার জন্মদিনে ডাকি এবং আমাদের মধ্যে একটি সর্ম্পক তৈরি হয়ে যায়।

এই জিনিস কিন্তু আমরা ব্যবসায়ে ব্যবহার করে ক্রেতার সাথে ভাল একটা সর্ম্পক করতে পারি।যেমন ক্রেতাকে কোন কিছু বিক্রি করার আগে তাকে ফ্রিতে এমন কিছু দিতে হবে যা তার জীবনে প্রভাব ফেলে বা তার জন্য গুরুত্বপূর্ন। 

যেমন ধরুন আপনার একটি গিফট শপ আছে। এখন আপনার যারা ক্রেতা তার প্রায় কনফিউজড থাকে যে তার প্রিয়জনকে কি গিফট দেয়া যায়।তাই আপনি যদি তাদের ফ্রিতে কিছু টিপস দেন গিফট সর্ম্পকে তাহলে তারা অনেক বেশি উপকৃত হবে। 


এর ফলে আপনার সাথে তাদের ভাল একটি সর্ম্পক হয়ে যাবে। এবং গিফট আপনার কাছ থেকেই নিবে। অন্যদিকে অনলাইনে আপনি ফ্রিতে তাদের কিছু দিয়ে তাদের ইমেইল কালেক্ট করে নিতে পারেন, ফলে তাদেরকে ইমেইল সেন্ড করেও প্রডাক্টের সেল বাড়াতে পারবেন।





৩.কনট্রাস্ট :


 মনে করুন আপনাকে বলা হল ১০ কেজির একটা বস্তা  উঠাতে। একটু কষ্ট করে হলেও আপনি উঠালেন। 


এইবার আপনাকে একটা ১ কেজির বস্তা দেয়া হল উঠানোর জন্য, এখন আপনার কাছে এক কেজির বস্তাটা কিছুই মনে হবে না ১০ কেজি বস্তার তুলনায়। 


তার কারন আমরা যখন কোন বড় কাজ করে ফেলি তারপর যদি কোন ছোট কাজ করি, তখন সেই ছোট কাজটিকে আমরা অনায়াসে করে ফেলতে পারি। এটাই হল কনট্রাস্ট। এখন আমরা এটা কিভাবে ব্যবহার করতে পারি।


মনে করুন আপনার শাড়ীর দোকান। এখন আপনি একটি শাড়ী ২০০০ টাকায় বিক্রি করতে চান। অনেকের কাছে ২০০০ টাকা বেশি মনে হতে পারে, কিন্তু আপনি যদি সরাসরি ২০০০ টাকা না লিখে যদি এর দামের পাশে ৪০০০ টাকা লিখে রাখেনে, এবং সেটা কেটে তার পাশে ২০০০ টাকা লিখে বলেন ৫০% ডিসকাউন্ট। তাহলে ৪০০০ টাকার তুলনায় ২০০০ টাকা অনেক কম মনে হবে। এবং তারা এটা কিনে নিবে। 




৪.সোশাল প্রুফ


আমরা যখন কোন জিনিস কিনি তখন সেটার রিভিউ সবার আগে দেখি, যে সবাই কি বলে। যদি ভাল রিভিউ হয় তখনই আমরা কিনি। এটাই আসলে সোশাল প্রুফ। সবাই যেটাকে বেশি পছন্দ করে আমরাও সেটাকেই অনুসরন করি। 

কিন্তু বর্তমানে এমন হয়েছে বেশির ভাগ মানুষই অনলাইনে ভাল রিভিউ দিতে চায় না। কিন্তু নেগেটিভ রিভিউ ঠিকই দেয়। 

এমন সময় আপনি কি করতে পারেন? আপনি একটি টেকনিক ব্যবহার করতে পারেন। সেটা হল আপনার ক্রেতাদের জেলার নাম উল্লেখ করে আপনি নিজেউ রিভিউ দিতে পারেন যেমন পন্যের ছবির সাথে লিখে দিতে পারেন ঢাকা থেকে ৫ জন,বরিশাল থেকে ৬ জন, রাজশাহী থেকে ১০ জন অর্ডার করেছে। আপনি কবে অর্ডার করছেন? এটা মানুষকে সোশাল প্রুফ দিবে। 



৫. কমিউনিটি : 


সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজের একটা কমিউনিটি তৈরি করুন যেখানে আপনি আপনার সেল করতে পারবে। 

যেমন আপনি ইউটিউব,ইনস্টাগ্রামে আপনার পন্য রিলেটেড বিভিন্ন ভিডিও বানাতে পারেন। আপনি যদি ড্রেস এর বিজনেস করেন তাহলে ড্রেসআপ রিলেটেড ভিডিও বানাতে পারেন। যেমন কোন অনুষ্ঠানে কি পরলে ভাল লাগবে,কিভাবে ড্রেস পরলে আপনাকে মানাবে ইত্যাদি। 


এতে করে আপনার একটি টার্গেট কাস্টমারের গ্রুপ তৈরি হয়ে যাবে। যারা কেবল আপনার কাছ থেকে পন্য নিবে।



এই ছিল ৫ টি মার্কেটিং যেগুলো ব্যবহার করলে আপনার বিক্রি ৩ গুন বাড়িয়ে ফেলতে পারবেন

মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন