Sam Walton Made In America বইয়ের বাংলা সামারি


আজ এমন ব্যক্তির জীবনীর উপড় বইটির রিভিউ লিখছি, যাকে ব্যবসার দুনিয়ার বস বলা যেতে পারে। যিনি কিনা একা হাতে বিশাল এক  সামাজ্য গড়ে তুলছিল।

তিনি হলেন ওয়াল মার্টের প্রতিষ্ঠাতা স্যম ওয়ালটন। তিনি একসময়কার পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী ব্যাক্তি ছিলেন। তার মৃত্যুর পরই বিল গেটস পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি হন। তিনি যদি বেচে থাকতেন এখনো তিনিই পৃথিবীর সর্বোচ্চ ধনীর আসনটি দখল করে রাখতেন।

ওয়াল মার্টের পরিচিতি 

 ওয়ালমার্ট পৃথিবীর সবচেয়ে বড় খুচরা পন্য বিক্রির প্রতিষ্ঠান।

ওয়াল মার্ট এতটা বড় যে, প্রতিদিন যদি আপনি প্রতিদিন একটি করে ওয়ালমার্টের শপ ঘুরে আসেন তবে সবগুলো শপ ঘুরে আসতে আপনার প্রায় ৩০ বছর সময় লাগবে।

এবং এই প্রতিষ্ঠানের কর্মরত কর্মী সংখ্যা মালদ্বীপের জনসং্খ্যারও চেয়েও দিগুন।  যা প্রায় ২৫ লক্ষ।

গুগল ম্যাপে সবচেয়ে বেশি সার্চ দেয়া প্রতিষ্ঠানটির নামও ওয়াল মার্ট। 
প্রতিদিন ওয়াল মার্টে ৪ কোটিরও বেশি কাস্টমার আসে। 

স্যাম ওয়ালটনের যাত্রা 

স্যাম ওয়ালটনের  যাত্রা শুরু হয় জেসি পেনি নামে এক রিটেইল স্টোরে থেকে। যেখানে তিনি একজন সেলসম্যান হিসেবে চাকরি করতেন ।কিছু বছর সেখানে কাজ করার পর। তিনি তার শশুড়ের কাছ থেকে ২০ হাজার ডলার ধার করে। নিউপোর্ট নামক এক স্থানে একটি দোকান নেয়।যেটি ছিল বেন ফ্রাংক্লিন এর একটি ফ্রেঞ্চাইজ শপ।

স্যম ওয়াল্টন যেই দোকানটি কিনেছিল সেটি আগে প্রতি বছরে ৭৫ হাজার ডলারের পন্য বিক্রি করত । এবং তার সামনের ঠিক একই  দোকান  প্রায় ১ লক্ষ ৫০ হাজার ডলারের পন্য বিক্রি করত।


তাই প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে এবং নিজের ব্যবসাকে আরো বেশি উন্নত করতে। তিনি খুচরা ব্যবসা সংক্রান্ত বিভিন্ন বই পড়া এবং সেমিনারে যাওয়া শুরু করল। সেখান থেকে সে যা শিখত তাই সে তার ব্যবসায় এপ্লাইও করত। 


এভাবেই তিনি বিভিন্ন জিনিষ শিখে এবং এপ্লাই করে কিছু বছরের মধ্যেই তার লসে যাওয়া দোকানটিকে নিউপোর্টের সবচেয়ে বড় দোকানে পরিনত করে।


তাই আপনিও যদি নিজের ব্যবসায় বড় হতে চান। তবে ব্যবসা সংক্রান্ত বিভিন্ন জিনিষ শিখুন এবং সেগুলো নিজ ব্যবসায় এপ্লাই করুন।


তার জীবনের সবচেয় বড় ধাক্কা 


যেই দোকানটি আগে প্রতি বছর মাত্র ৭৫ হাজার ডলারের পন্য বিক্রয় করত। তার পরিশ্রম চেষ্টার কারনে সেই দোকানটিই প্রায় ২ লক্ষ ৫০ হাজার ডলারের পন্য বিক্রি করা শুরু করল। 


কিন্তু সেই সময় স্যম ওয়ালটনের জীবনে আসে এক ট্রেজেটি। তিনি যার কাছ থেকে দোকানটি নিয়েছিল সেটি ছিল ৫ বছরের চুক্তি। দোকানটি ভাল চলছিল বিধায়। সেই দোকানের মালিক তাকে আর দোকনটি পরিচালনা করতে দিল না। এবং তাকে দোকান থেকে বের করে দিল। তার এত বছরের পরিশ্রম সব বিফলে চলে গেল। 



তারপরও স্যম ওয়ালটন হার মানে নি। তিনি নতুন দোকান খোজা শুরু করে।কিছু দিন পর বেন্টন ভিল নামক ছোট একটি শহরে তিনি একটি দোকান ক্রয় করেন।


সেই শহরের জনসং্খ্যা ছিল প্রায় ৩ হাজার। সেখানে আগে থেকেই আরো বড় বড় দুটি দোকান ছিল। এত কম মানুষের জন্য সেখানে একটি দোকানই যথেষ্ট ছিল। কিন্তু স্যম ওয়াল্টন সেখানেই দোকান খোলার সিদ্ধান্ত নেয়। 


নতুন জিনিষ শিখে এবং তা এপ্লাই করার টেকনটি সে এখানেও অব্যহত রাখে। 

তিনি একবার জানতে পারে যে  পাইপ স্টোন এবং ওরথিংটন নামক স্থানে ব্রেন ফাংকলিনের দুটি শপ স্লেফ সার্ভিস এবং প্রাইজ ট্যাগ পদ্ধতি চালু করেছে। 


এটা শুনে  দেরি না করে সারারাত ট্রাভেল করে সেখানে যায় এবং শিখে আসে তারা কীভাবে কি করে। এবং সেখান থেকে এসব শিখে এসে সেগুলো তার দোকানে এপ্লাই করা শুরু করে। এভাবে করতে করতে সে সেখানেও নিজের স্থান দখল করে ফেলে। 



তিনি বলেন যে," কোন নতুন জিনিষ তুমি যদি তৈরি করতে না পার তবে অন্যের কাছ থেকে কপি কর এবং নিজ প্রতিষ্ঠানে এপ্লাই কর বৈধ ভাবে"। 

শুধু স্যম ওয়ালটনই না, স্টিভ জবস, বিলগেটস তারাও ভাল ভাল জিনিষ কপি করেছে এবং তাদের ব্যবসায় এপ্লাই করেছে । কেউ যদি তার ব্যবসায় নতুন কিছু করে তবে আপনিও সেগুলো আপনার ব্যবসায় কপি করুন। ব্যবসায় অন্যের জিনিষ কপি করতে দ্বিধা করবেন না।তবে তা যেন অবৈধ না হয়



টার্নিং পয়েন্ট

স্যাম ওয়াল্টনের জীবনের সবচেয়ে বড় টার্নিং পয়েন্ট তখন আসে, যখন তিনি ডিসকাউন্ট শপের কথা জানতে পারে। ডিসাকাউন্ট স্টোর এমন এক দোকান যেখানে ১ / ২ টা পন্যের উপড় ডিসকাউন্ট দিত না বরং সবগুলো পন্য তেই ডিসকাউন্ট দিত।



এই আইডিয়াটা স্যাম ওয়াল্টনের অনেক ভাল লাগে। এবং সে ডিসকাউন্ট শপের  প্রস্তাব নিয়ে বাটলার ব্রাদারের কাছে যায়।

 
যাদের বেন ফ্রাংকিলন দোকান সে চালাচ্ছিল। কিন্তু বাটলার ব্রাদারের কাছে এই আইডিয়াটি  মোটেও ভাল লাগে নি। এবং তাকে সাহায্য করার জন্য তারা রাজি হয় নি। 


কিন্তু স্যাম ওয়াল্টন ছিল জেদি সে নিজে নিজেই চালু করে দেয় ডিসকাউন্ট শপ যা আজকের ওয়ালমার্ট হিসেবে পরিচিত। তিনি বলতেন "ঐ দিন যদি আমি নিজে ডিসাকাউন্ট শপ খোলার সিদ্ধান্ত না নিতাম। তবে আজও বেন ফ্রাংক্লিনের দোকান চালাতাম"

সে যখন প্রথম ডিসকাউন্ট শপটি চালু করে তার কাছে না ছিল সেলসম্যান, না ছিল  কম্পিউটার, না ছিল ভাল ডেকোরেশন। এমন কি একজন ত এইও বলেছিল যে "তার দেখা সবচেয়ে বাজে দোকান হল এটি"। 


এত কিছু না থাকার পর স্যাম ওয়াল্টন চাইলেই বলতে পারত, "আরে আমার কাছে ত কিছুই নেই, আমি কিভাবে  দোকান চালাবো!" 
এসব না থাকা সত্তেও স্যাম ওয়াল্টন মূল দুটি বিষয়ের উপড় সবসময় খেয়াল রাখত।

১. যত কম দামে সম্ভব ক্রেতাদের পন্য দেয়া।
২. ক্রেতার সন্তুষ্টি।


এমনকি স্যাম ওয়াল্টন তার ক্রেতাদের বলত যে, "এর চেয়ে  কম দামে যদি পন্য পাও, তবে নির্ধাদ্বায় আমাদেরকে পন্য ফেরত দিয়ে যেতে পার। আর যদি পছন্দও না হয় তাও ফেরত দিয়ে যেতে পার।"

তার এই মূল নীতির কারনে ওয়াল মার্টকে আর পিছনে ফিরে তাকারে হয় নি। এক এক করে দুনিয়া জুড়ে ব্যবসা ছড়ানো শুরু করে।

তাই যখনই কোন ব্যবসা শুরু করবেন সবার আগে ফোকাস করতে হবে ক্রেতার সন্তুষ্টি এবং ক্রেতার সুবিধাতে কারন দিন শেষে এই দুটি জিনিষই আপনাকে সফল করবে।


কারন বর্তমানে যারা নতুন ব্যবসা করছে তারা কেবল বাইরে চাকচিক্যের প্রতিই বেশি খেয়াল রাখে। ক্রেতার চিন্তা ত করেই না। যার ফলে কিছু বছরের মধ্যেই সব শেষ হয়ে যায়।

তাই স্যাম ওয়াল্টনের মত সবার আগে ক্রেতার সুবিধা দেখুন বাকি সব আপনা আপনিই চলে আসবে।

এই ছিল স্যাম ওয়াল্টন লাইফ থেকে পাওয়া কিছু শিক্ষা । যেগুলো Sam walton Made in America বই থেকে নেয়া। এই বইটি এত বেশি পাওয়ার ফুল যে,বর্তমান পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি জেফ বেজস। সে নিজেও বইটি পড়ে এবং সেখান থেকে পাওয়া নলেজ গুলোকে এপ্লাই করে। 

সবচেয়ে প্রেরনা মূলক উক্তি

ডেভিড ক্লাস নামে স্যাম ওয়াল্টনের এক বন্ধু   বলেছিল যে, "স্যাম ওয়াল্টনের একটি বিষয় সবার চেয়ে আলাদা ছিল। সেটা হল সে কখন ভুল করতে ভয় পেত না। সে যখন বুঝতে পারত যে সে ভুল করছে তখনই সে তার ফোকাস ভুল থেকে সরিয়ে সঠিকে নিয়ে আসত। সে তার ভুল নিয়ে বেশি মাথা ঘামাতো না"






মন্তব্যসমূহ