ব্যক্তিগত স্বাধীনতার ৪ টি Agreements

 

ব্যাক্তিগত স্বাধীনতা চায় না এমন মানুষ আসলে কমই আছে। ব্যাক্তিগত স্বাধীনতা কীভাবে আসে?

 অনেক অনেক টাকা পয়সা থাকলে!


মোটেও না এই জিনিষ ত কিনতেও পাওয়া যায় না। টাকা পয়সা থাকলে কেবল পাওয়া যায় অর্থনৈতিক স্বাধীনতা আর ব্যাক্তিগত স্বাধীনতা পেতে হলে এই বইটি আপনাকে অবশ্যই পড়তেই হবে।

২৩ বছর ধরে বেস্ট সেলার বই এমনি এমনি হয় নি। কিছু জিনিষ আছে বলেই মানুষের অন্যতম প্রিয় একটি বই।

এই বইয়টিতে ৪ টি এগ্রিমেন্টর বলা আছে যা আপনাকে সফলতা,সুখ এবং জীবনকে আনন্দের সাথে বাচার পন্থা বলবে। এই ব্লগে সেই ৪ টি পন্থারই ছোট একটি বিবৃতি দেব।

So let's Begin


1.Be Impecable with your words : 


এর অর্থ হল কখনো নিজের সম্পর্কে অথবা অন্যের সম্পর্কে খারাপ বলা যাবে না। নিজের কথায় যেন সবসময় ভাল শব্দগুলো ব্যবহৃত হয় যা নিজেকে এবং অন্যকে ভালো অনুভব করাবে। কথার শক্তি সম্পর্কে একটি গল্প ত বলতেই হয়।

বিখ্যাত বিজ্ঞানী টমাস আলভা এডিসনের নাম ত আমরা প্রায় সবাই শুনেছি। 

একবার টমাস আলভা এডিসনকে তার শিক্ষক একটি চিঠি দিয়ে বলে,"এই চিঠিটি তুমি তোমার মা কে দিবে " টমাস তার মার কাছে চিঠিটি দেয় এবং সে বলে তাকে চিঠিটি পড়ে শুনাতে।

মা চিঠি পড়া আরম্ভ করল, 

আপনার সন্তান অনেক বুদ্ধিমান। তার অনেক প্রতিভা আছে,সে এতটাই মেধাবী যে আমাদের শিক্ষকরা তাকে পড়াতে পারবে না। আপনি বরং অন্য ভাল স্কুলে তাকে ভর্তি করান।

এই কথা শোনার পর সে অনেক বেশি মোটিভেটেড হয়ে যায়।কিছু বছর পর টমাস আলভার মা যখন মারা যায় তখন সে একজন জনপ্রিয় বিজ্ঞানী। একদিন মায়ের জিনিষ পত্র গোছাতে গিয়ে সে সেই চিঠিটি পায় যেটি তার শিক্ষক তার মাকে দিয়েছিল । এবং সেখানে আসলে যা লেখা ছিল, "আপনার ছেলে পড়শুনায় অনেক দুর্বল, তার মধ্যে প্রতিভার কোন ছিটেফোটা নেই, সে এতটায় নির্বোধ যে আমাদের শিক্ষকরা তাকে পড়াতে পারবে না। আপনি অন্য স্কুলে তাকে ভর্তি করান।"

ঐ দিন যদি তার মা তাকে সত্য কথাটি বলত তবে হয়ত আজ আমরা গ্রেট টমাস আলভা এডিসনকে পেতাম না। তাই সবসময় নিজেকে এবং অন্যকে ভালো ভালো কথা বলুন।


2.Don't Assume :


 করনা ভাইরাসের প্রদুর্ভাব তখন প্রথম দিকে।  চারিদিকে ডেটল,স্যাভলনের জন্য হা হা কার চলছিল। আমারো একটা বোতল ডেটলের দরকার ছিল। আমার ধারনা ছিল শত চেষ্টা করেও আমি পাব না। প্রথমে এক দোকানে গেলাম উনি বলল, "ভাই কোম্পানিই আমাকে ২ টা দিছে এগুলাও শেষ।" 


এখন আমি এ দোকান ও দোকান ঘুরছি কিন্তু কোথায়ও পাচ্ছিলাম না।

এমন সময় ছোট একটি দোকানের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম, তখন মনে হল এই দোকানে হয়ত পেতে পারি কিন্তু তৎক্ষনাত আবার এটাও মনে হল, এত দোকানে যেহেতু পাই নি এটা ত আরো আগে পাব না। 

আরেকবার চিন্তা করলাম সবগুলোতে যখন দেখেছি এটাতেও একবার চেষ্টা করে দেখি। এবং সারপ্রাইজিংলি ঐ দোকানটিতে  একটি মাত্রই বোতল ছিল এবং সেটা আমি কিনে আনলাম।


আমি যদি আমার নিজের ধারনা নিয়ে বসে থেকে  ঐ দোকানে গিয়ে ডেটল না চাইতাম তাহলে হয়ত লাস্ট পিসটিও পেতাম না।

সেদিন আমি একটি জিনিষ শিখলাম আর সেটা হল, যে কখনো কোন জিনিষ নিয়ে আগে থেকে অনুমান করে,  সেখানে নিজের মন গড়া কোন বিবৃতি দেয়া ঠিক না। 

যেমন নতুন একটা জিনিষ শিখতে অনেকে আগেই অনুমান করে নেয় যে আরে এটা ত অনেক কঠিন হবে মনে হয়, আমি পারব না। 


আচ্ছা বলুন ত যে জিনিষ সম্পর্কে  ভালো ভাবে জানলামই না। একবারের জন্য চেষ্টাও করলাম সেটার উপড় কঠিন এর ট্যাগ লাগানো কি ঠিক!

তাই কখনো কোন জিনিষকে সঠিকভাবে না জেনে সেটাতে অনুমান করা ঠিক না। এতে আমাদের হাত থেকে অনেক বড় বড় সুযোগ হাত ছাড়া হয়ে যেতে পারে। তাই অনুমান না করে চেষ্টা করা উচিত। কিছু প্রশ্ন থাকলে জেনে নেয়া উচিত। কিন্তু নিজ থেকে অনুমান করা ঠিক না।


3. Don't  Take It personally : 


একজন অপরিচিত মানুষ যদি হুট করে এসে বলে, "আপনি একটা স্টুপিড!" 


তখন আপনি কি করতেন?

আপনি হয়ত রেগে অগ্নিশর্মা হয়ে  যেতেন এবং পারলে দু ঘা দিতেন। কিন্তু আসলেই কি আমাদের অন্যের সমোলচনাতে এভাবে রিয়েক্ট করা উচিত?


অবশ্যই না,  আমাদের কখনোই অন্যের সমোলচনাতে রিয়েক্ট করা উচিত না।


কারন কিছু কিছু মানুষ চায়ই আমরা তাদের কথার উপড় রিয়েক্ট করি। দেখুন আপনার রাগ,ক্ষোপ,ডিপ্রেশন যদি অন্য আরেকজনের কথার দ্বারা প্রভাবিত হয় তবে যে কেউ আপনাকে প্রভাবিত করতে পারবে। তাই মানুষের খারাপ সমোলচনাকে কখনো ব্যাক্তিগত ভাবে নিবেন না। মানুষ সমোলচনা করবেই সেটা ভালোই হোক কিংবা খারাপই হোক। 


প্রথম যখন কম্পিউটার আবিষ্কার হয় তখনও কিন্তু অনেকে সমোলচনা করেছিল।  আর কম্পিউটারের সাথে যারা যুক্ত ছিল তারা যদি প্রতিটি বিষয় গুলোকে ব্যাক্তিগত ভাবে নিত তবে হয়ত কম্পিউটার নামের বস্তুটি আমাদের জীবনে কখনো আসতই না। তাই যেকোন সমোলচনাকে ব্যাক্তিগত ভাবে নিবেন না।


"Comments are the reality of commentator's reality not yours"


4. Do your Best :


 আমার সবচেয়ে প্রিয় একটা এগ্রিমেন্ট হল  এটি। আমি হয়ত পার্ফেক্ট কিছু করতে পারব না, কিন্তু আমি আমার বেস্ট ত দিতে পারব এবং এই বেস্ট দেওয়াটাই আমাকে একদিন পার্ফেক্ট বানাবে। আমরা যে কাজই করব সেখানে নিজের বেস্ট দেয়ার চেষ্টা করব। আমরা যখন কোন কাজে নিজের বেস্ট দেয়ার চেষ্টা করব সেখান থেকে আমরা অপ্রত্যাশিত ভাল ফলাফল পাব।


Hv Kaltenborn অনেক দেশ ঘুরে সে ফ্রান্সে আসে। সেখানে সে একটি সেলসম্যানের চাকরি পায়। কিন্তু সে ফ্র‍্যাঞ্চ ভাষা জানত না। তারপরও সে একবছরে ৫০০০ ডলার কমিশন পায় তার কোম্পানি কাছ থেকে ভালো সেলস এর কারনে। 

তিনি বলেন, আমি হয়ত ফ্রেঞ্চ জানতাম না, কিন্তু এই জিনিষটা আমাকে আমার কাজের বেস্ট দেয়ার ক্ষেত্রে কখনো বাধা হয়ে দাড়ায়নি। আমি প্রতিদিন আমার সর্বোচ্চটা দেয়ার চেষ্টা করতাম। আমি একটি কাগজে কিছু ফ্রেঞ্চ শব্দ লিখে নিয়ে যেতাম এবং সেগুলো নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে বলার চেষ্টা করতাম। আমার মুখের ফ্রেঞ্চ শব্দটা আমার কাস্টমারের কাছে খুব ফানি লাগত এবং তার আমার প্রতি আরো বেশি আগ্রহ দেখাতে থাকে। তারপর আমি তাদেরকে বলতাম আমি আসলে একজন আমেরিকান এবং ফ্রেঞ্চ লেখা কাগজটা টুপি থেকে বের করে তাদের দেখাতাম। আমার কাজের প্রতি আমার ভালোবাসা দেখে তারা সবসময় আমার কাছ থেকেই পন্য নিত এবং আমি হয়ে গেলাম বছরের বেস্ট সেলসম্যান। 


তাই সবসময় নিজের কাজের বেস্ট দেবার চেষ্টা করবেন।

এই ছিল ৪ টি এগ্রিমেন্ট যেগুলো The Four agreements by Don Miguel Ruiz বই থেকে নেয়া। ছোট একটি বই সকলের পড়া উচিত।।

মন্তব্যসমূহ