প্রযুক্তি উপড় ধারনা না থাকার পরও পৃথিবীর সবচেয়ে বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের কর্নধারের জীবনী।



স্টিভ জবস পৃথিবীর প্রথম ট্রিলিয়ন ডলার কোম্পানি অ্যাপলের সহ প্রতিষ্ঠাতা। প্রযুক্তি নিয়ে পড়াশুনা না করেও যে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় প্রযুক্তি ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা যায় তার এক জলন্ত উদাহরন হল এই স্টিভ জবস। তথ্য প্রযুক্তির দুনিয়ায় তার অবদান অসামান্য। প্রায় ২৮০ টির বেশি প্যাটন্ট রয়েছে তার নামের পাশে।
তাই আজকে তারই জীবনী সম্পর্কে জানব।

অসাধারন এক জন্মকাহিনী:


স্টিভ জবসের জন্মধাত্রী ছিলেন একজন অবিবাহিত কলেজ ছাত্রী। অবিবাহিত হওয়ার কারনে তিনি তার ছেলেকে দত্তক দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তিনি চেয়েছিলেন
যে তার ছেলে যেন একটি শিক্ষিত পরিবারে বেড়ে  উঠে। প্রথমে এক আইনজীবির পরিবার তাকে দত্তক নেয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও, পরর্বতীতে সিদ্ধান্তের পরির্বতন করে তারা একটি কন্যা সন্তানকে দত্তক নেয়।
অন্য আরেকটি পরিবার তাকে দত্তক নেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন।কিন্তু সেই পরিবারের বাবা-মা শিক্ষিত না হবার কারনে,স্টিভ জবসের মা তাদেরকে তার সন্তান দিতে রাজি হয়নি।অনেক কথা বার্তার পর সকলে এই সিদ্ধান্ত উপনীত হয়েছিল যে তারা স্টীভ জবসকে ভাল কলেজে পাঠাবে পড়াশুনা করার জন্য। এই কথা শুনে স্টিভ জবসের মা তাদেরকে তার পুত্র সন্তান দেয়ার জন্য রাজী হয়। এবং সে তাদের কাছেই বেড়ে ঊঠে।

পড়াশুনা যখন তার কাছে মূল্য হীন:

 জন্মধাত্রী মাকে দেয়া কথা মত স্টিভ জবসকে তার দত্তক নেয়া বাবা মা তাকে বড় একটি কলেজে পড়াশুনার জন্য ভর্তি করায়। কিন্তু কলেজে ৬ মাস ক্লাস করার পর। তার হঠাৎ একদিন মনে হলে যে এই পড়াশুনা তাকে কখনই তার স্বপ্ন পূরনে সাহায্য করতে পারবে না। তাই কলেজে ভর্তির ৬ মাস পরই সে কলেজ থেকে বেরিয়ে যায়। 

শুরু হল সংগ্রাম :

কলেজ থেকে বের হয়ে যাবার পর তার থাকার কোন জায়গা ছিল। শেষ মেষ জায়গা হয় তার বন্ধুদের হোস্টেলের মেঝেতে। কোকাকোলার বোতল দোকানে দোকানে ফেরত দিয়ে যেই টাকা পেত, সেই টাকা দিয়ে আধ পেটা খেয়ে দিন যাপন করত। সপ্তাহে একদিন  রবিবার ৭ মাইল হেটে হরে কৃষ্ণ মন্দিরে গিয়ে ফ্রিতে পেট পুরে খেয়ে আসত।

তার উপর কলেজের গতানুগতিক পড়া শুনার চাপ না থাকায়। তার যখন যা ইচ্ছা সে তাই শিখত। 
একবার তার কলেজে ক্যালিওগ্রাফির কোর্স চালু হয়। তখন কলেজের পোস্টার ক্যালিওগ্রাফি দিয়ে অনেক সুন্দর করে সাজানো হত। এটা দেখে তার খুব ভাল লাগে এবং সে ক্যালিওগ্রাফি শেখা শুরু করল।

স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে দেয়া তার ব্যক্তব্যে তিনি বলেন যে 
"আমি নিজেও জানতাম যে আমার এই ক্যালিওগ্রাফির জ্ঞান ভবিষ্যৎ এ আমাকে কিভাবে সাহায্য করবে। কিন্তু ১০ বছর পর যখন আমরা ম্যাক ডিজাইন করছিলাম তখন ম্যাক এর টাইপগ্রাফি ডিজাইন করতে গিয়ে আমার এই ক্যালিওগ্রাফি শিক্ষাটি কাজে লাগে।"

আজকে আমরা মাইক্রোসফট অফিসে যে সুন্দর সুন্দর ফন্টগুলো ব্যবহার করি।তা কিন্তু স্টিভ জবসের কলেজ ছেড়ে ক্যালিওগ্রাফি শেখারই ফল।

Apple এর যাত্রা :

স্টিভ জবস একদিক থেকে অনেক ভাগ্যবান ছিল। কারন স্টিভ জবসের যেখানে বেড়ে ওঠা সেই এলাকাটিকে বলা হত সিলিকন ভ্যালির আতুর ঘর। সবাই সেখানে নতুন স্টার্ট আপ নিয়ে কাজ করত।তাই ছোট বেলা থেকেই তার মন মানসিকতা একজন উদ্যোক্তার মতই গড়ে ওঠেছিল।
তাই বড় হয়েই স্টিভ ওজনিএকে সাথে নিয়ে বাড়ির গ্যারজ থেকে Apple এর যাত্রা শুরু করে।প্রথম প্রথম মানুষের কাছ থেকে অগ্রীম টাকা নিয়ে তারা তাদের জন্য কম্পিউটার তৈরি করে দিত। তার একটাই স্বপ্ন ছিল যে পৃথিবীর প্রতিটি মানুষ যেন তাদের কম্পিউটার ব্যবহার করতে পারে। অনেকে বলবে "যে সবাই কোথায় তাদের কম্পিউটার ব্যবহার করতে পারে" কিন্তু প্রথমদিককার কম্পিউটার আরো বেশি বড় এবং দামি ছিল। যা 
অ্যাপলই প্রথম কমদামে বাজারে ছাড়ে। সেই স্বপ্ন নিয়ে তিলে তিলে গড়ে তোলে তার স্বপ্নের প্রতিষ্ঠানকে 

Apple থেকে বরখাস্ত :

Apple তখন সফলতার চূড়ায়। সকলের মুখে মুখে শুধু Apple এর নাম। Apple এর কর্মকান্ডকে আরো বেশি গতিশীল করতে স্টিভ জবস একজন দক্ষ ম্যানেজার নিয়োগ দেয়। কিন্তু কিছুদিন যাবার পর স্টিভ জবস বুঝতে পারে তার সাথে নতুন ম্যানেজারের চিন্তা ভাবনা মিলছে না। কিন্তু ম্যানেজার আগে বিনিয়োগকারীদের সাথে ভাল বোঝা পড়া করে নেয়। তাই স্টিভ জবস যখন সেই ম্যানেজারকে  কোম্পানি ছেড়ে যাওয়ার প্রস্তাব দেয়।বিনিয়োগকারীরা উল্টো স্টিভ জবসকেই কোম্পানি ছেড়ে চলে যেতে বলে। নিজের প্রতিষ্ঠিত কোম্পানি থেকে নিজেই বরখাস্ত হয় ৩০ বছর বয়স।


Next এর যাত্রা :


স্টিভ জবস ছিল একজন যোদ্ধা। শতপ্রতিকূলতার সত্তেও হার মানে নি। নিজের প্রতিষ্ঠিত কোম্পানি থেকে বার করে দেয়ার পর। তিনি প্রতিষ্ঠা করে Next নামে আরেকটি কোম্পানি। নিজের কাজকে তিনি এতটাই ভালবাসতেন যে তিনি তার নতুন কোম্পানিতেও ব্যাপক সফলতা পায়।


Pixel এর যাত্রা : 


টয় স্টোরি মুভিটি আমরা প্রায় সবাই দেখেছি।এই টয় স্টোরি মুভিটির প্রযোজক ছিলেন স্টিভ জবস। এই মুভিটি দিয়ে যাত্রা শুরু হয় পিক্সেল প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানটির। পরর্বতীতে এই পিক্সেল এর অধীনে তৈরি হয় আরো অনেক জনপ্রিয় চলচিত্র যেমন জুটুপিয়া,ইনসাইড আউট,মোয়ানা ইত্যাদি। পরে ওয়াল্ট ডিজনে এই প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানটিকে কিনে নেয়।

Apple এ আবার প্রতার্বতন : 

১৯৯৯ সালে অ্যাপলের অবস্থা এক ডুবন্ত জাহাজের মত হয়ে যায়। চারিদিক থেকে এর জনপ্রিয়তা কমে যাচ্ছিল। তখন সকল বিনিয়োগকারীরা স্টিভ জবসকে অ্যাপলে ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেয়। অ্যাপল স্টিভজবসের Next কোম্পানিটি কিনে নেয় এবং তাকে আবার অ্যাপলে ফিরিয়ে আনা হয় সিইও হিসেবে। বর্তমানেও অ্যাপল স্টিভ জবসের গড়ে তোলা কোম্পানি Next এর প্রযুক্তি ব্যবহার করে। একে একে তার হাত দিয়ে গড়ে উঠে আইফোন,আইপড,ম্যাক বুক ইত্যাদি গ্রেট পন্য। 

গুনীরা কখনো মরে না তারা বেচে থাকে তাদের কাজের মাঝে : 

২০১২ সালে মাত্র ৫৫ বছর বয়সে অগ্নাশয়ে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় প্রযুক্তির দুনিয়ার এই রাজা। কোটি কোটি  তরুনের অনুপ্রেরনার নাম স্টিভ জবস। স্টিভ জবস বেচে থাকবে হাজারো তরুনদের মধ্যে।

সমলোচনা :

স্টিভ জবসকে নিয়েও কিছু সমলোচনা ছিল
সে তার নিজ মেয়ে লিসাকে তার মেয়ে হিসেবে মানত না। যদিও পরর্বতীতে সে তাকে তার মেয়ে হিসেবে মেনে নেয়।

স্টিভ জবসের কিছু বুদ্ধিদীপ্ত কর্মকান্ড :


প্রথম দিককার কম্পিউটারের স্ক্রিন ছিল কালো রং এর। জেরক্স পার্ক কোম্পানি যারা ফোটকপি মেশিন তৈরি করে। তাদের বিজ্ঞানীরা কালারফুল গ্রাফিক্স তৈরি করে। স্টিভ জবস এই কথা জানতে পেরে তাদেরকে একটি প্রস্তাব দেয় যে তাদেরকে অ্যাপলের ১ লক্ষ শেয়ার দিবে মাত্র ১ মিলিয়ন ডলারে। কিন্তু তারা যেই টেকনলজি আবিষ্কার করছে তার ফর্মুলা অ্যাপলকে বলতে হবে।
জেরক্স পার্কের বিনিয়োগকারীদের কাছে এটা অনেক ভাল প্রস্তাব মনে হয়েছিল। তারা রাজী হয়ে যায়। অনেকে স্টিভ জবসের এত কম দামে এতগুলো শেয়ার দিয়ে দেয়াটাকে সমলোচনা করে। কিন্তু স্টিভ জবস সেই টেকনলজিকে আরো বেশি উন্নত করে ম্যাক এবং লিজা প্রজেক্টে ব্যবহার করে পুরো মার্কেটকে দখল করে নেয়। আজ আমাদের কম্পিউটার গুলোর উন্নত গ্রাফিক্স কেবল তার এই সিদ্ধান্তের বধৌলতে সম্বব হয়েছে। 

মন্তব্যসমূহ